বাংলায় এ+ পাওয়ার নিয়ম কানুন
জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা জেএসসি পরীক্ষার গুরুত্ব অনেকেই হয়তো যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পারছ না। এককথায় এ পরীক্ষার ফল তোমার সারা জীবনের সঙ্গী। নবম শ্রেণীতে ভর্তি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন—এমনকি চাকরিজীবনেও প্রভাব ফেলবে জেএসসির ফলাফল। শিক্ষাজীবনেরপ্রতিটি স্তরেই এ পরীক্ষার জিপিএ যোগ হবে। কাজেই জিপিএ ভালো থাকলে তুমি এগিয়ে থাকবে আর জিপিএ কম থাকলে পেছনে পড়বে। কারণ সারা দেশের ১৫ লাখ ২০ হাজার পরীক্ষার্থী একসঙ্গে একই প্রশ্নে পরীক্ষা দিচ্ছে। সবার সঙ্গেই তোমার প্রতিযোগিতা। আর এ প্রতিযোগিতায় যোগ্যতমরাই কেবল টিকে থাকবে। তাই তুমিই হবেসেই যোগ্যতম—শিক্ষার্থী ।
পরীক্ষার ধরন ও পদ্ধতি: বাংলা প্রথম পত্র ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৬০ নম্বর সৃজনশীল অংশে এবং ৪০ নম্বর বহুনির্বাচনী অংশের জন্য বরাদ্দ। তোমার সাহিত্যকণিকা বইয়ে মোট ১৮টি গদ্য পাঠ্য আছে। এই গদ্যাংশ থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে ৫টি, উত্তর দিতে হবে ৩টির। আর কবিতা পাঠ্য আছে ১৪টি। কবিতাংশ থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে ৪টি এবং উত্তর দিতে হবে ৩টির। এই ৬টি প্রশ্নের উত্তর করার জন্য সময় পাবে দুই ঘণ্টা ১০ মিনিট। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য তুমি সর্বোচ্চ ১৯ থেকে ২০ মিনিট সময় পাবে। এর বেশি সময় নিলেই সব কটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। আর কোনোক্রমেই গদ্য থেকে ৪টি, কবিতা থেকে ২টি অথবা কবিতা থেকে ৪টি, গদ্য থেকে ২টি—এ রকমভাবে উত্তর দেওয়া যাবে না। উভয় অংশ থেকে তিনটি করে মোট ছয়টি প্রশ্নের উত্তরই দিতে হবে।
এবার বহুনির্বাচনী প্রসঙ্গ। তোমার পাঠ্যসূচির ৩২টি গদ্য-কবিতার সব কটি থেকেই কমপক্ষে ১টি করে মোট ৪০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ) থাকবে। এই ৪০টি MCQ প্রশ্নের মধ্যে আবার চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তর-জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ এবং উচ্চতর-দক্ষতার প্রশ্নও থাকবে। সব প্রশ্নেরই উত্তর করতে হবে। সময় পাবে ৪০ মিনিট। তবে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য কোনো বৃত্ত ভরাট করতে হবে না। তোমার সৃজনশীল পরীক্ষার খাতার সঙ্গেই বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরপত্র থাকবে। MCQ প্রশ্ন পাওয়ার পর সেই উত্তরপত্রের বৃত্তে টিকচিহ্ন দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, উত্তরপত্রে কোনো কাটাকাটি চলবে না। অর্থাৎ একটা উত্তর একবার দিয়ে আবার কেটে আরেকটা দেওয়া যাবে না।
এবার বাংলা দ্বিতীয়পত্র প্রসঙ্গ। ১০০ নম্বরের দ্বিতীয় পত্রে ৫০ নম্বর রচনামূলক অংশের জন্য এবং বাকি ৫০ নম্বর বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ। রচনামূলক অংশের উত্তরের জন্য সময় পাবে দুই ঘণ্টা। এখানে যেভাবে উত্তর দিতে হবে তা হলো—২টি ইংরেজি অনুচ্ছেদ থেকে একটির বাংলায় অনুবাদ, নম্বর—৫। ২টি চিঠিপত্র বা আবেদনপত্র থেকে একটির উত্তর, নম্বর—১০। ২টি সারাংশ বা সারমর্ম থেকে একটির উত্তর, নম্বর—১০। ২টি ভাবসম্প্রসারণ থেকে ১টির উত্তর, নম্বর—১০ এবং ৫টি রচনা থেকে ১টির উত্তর, নম্বর—১৫। আর বহুনির্বাচনী অংশে ৫০টি MCQ এর জন্য সময় পাবে ৫০ মিনিট। আর এই ৫০টি প্রশ্নের মধ্যে ৫টি প্রশ্ন অনুবাদ ও ৫টি প্রশ্ন চিঠিপত্র অংশ থেকে থাকবে। বিরচন অংশ (অষ্টম শ্রেণীর রচনাসম্ভার বইয়ের সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, পারিভাষিক শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ ইত্যাদি) থেকে থাকবে ১০টি প্রশ্ন। আর বাকি ৩০টি MCQ থাকবে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীর বোর্ডের ব্যাকরণ বইয়ের ভাষা ও ব্যাকরণ, ধ্বনি ও বর্ণ, সন্ধি, শব্দ পরিচয়, পদ, বচন, লিঙ্গ, পুরুষ, কারক ও বিভক্তি, অনুসর্গ, উপসর্গ, ক্রিয়ামূল, কাল, সমাস, বাক্য ও বাক্যের প্রকারভেদ, স্বরভঙ্গি ও বিরাম চিহ্ন অধ্যায় থেকে। এখানেও বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরগুলোতে টিকচিহ্ন দিতে হবে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ভালো করার জন্য বোর্ডের ব্যাকরণ ও রচনাসম্ভার বইটি ভালোভাবে পড়তে হবে।
# সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নোত্তরের জন্য নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে।
১. সৃজনশীল পদ্ধতিতে যেকোনো গল্প-কবিতার ভাবের আলোকে একটি মৌলিক উদ্দীপক থাকে এবং যে গল্প বা কবিতার আলোকে উদ্দীপক তৈরি করা হয়েছে, সেই গল্প বা কবিতা থেকেই জ্ঞান এবং অনুধাবনমূলক প্রশ্ন করা হবে। কোনোক্রমেই উদ্দীপক থেকে জ্ঞান এবং অনুুধাবনের প্রশ্ন করা যাবে না। সৃজনশীল পদ্ধতিতে যেহেতু চারটি অংশ (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা) মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশ্ন, তাই প্রতিটি অংশের উত্তর লেখার সময় প্রতিবার ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর (ক), ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর (খ), ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর (গ) এবং ১নম্বর প্রশ্নের উত্তর (ঘ)—এভাবে লিখতে হবে। আর এ লেখাগুলো ভিন্ন রঙের (সবুজ/নীল/মেরুন/বাদামি ইত্যাদি) কালি দিয়ে লিখলে দেখতে ভালো লাগবে।
২. যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করলে তার চারটি অংশের উত্তরই ধারাবাহিকভাবে লিখতে হবে। একটি প্রশ্নের জ্ঞানের উত্তর আরেক প্রশ্নের প্রয়োগের উত্তর—এভাবে করা যাবে না। কোনো উত্তর যদি কেউ না পারে, সে ক্ষেত্রে সেটা বাদ দিয়ে এর পরের অংশের উত্তর কতে হবে। জায়গা ফাঁকা রাখার দরকার নেই।
৩. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর একটি শব্দে, একাধিক শব্দে বা একটি বাক্যে দেওয়া যাবে। তবে আমরা জ্ঞানমূলকের উত্তর একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্যে দেওয়ার চেষ্টা করব। যেমন—‘অবাক সূর্যোদয়’ কবিতার ভাবের আলোকে নিচে একটি উদ্দীপক এবং সংশ্লিষ্ট চারটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। এর একটি নমুনা উত্তরও দেওয়া হলো। এ থেকে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের রীতিনীতি, উত্তরের পরিসীমা সম্পর্কে স্পষ্ট একটি ধারণা পাওয়া যাবে।
৪। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের নম্বর-২। কারণ এর মধ্যে একটি নম্বর জ্ঞানের জন্য, আরেকটি নম্বর অনুধাবনের জন্য। তুমি ইচ্ছে করলে জ্ঞান অংশের উত্তর আগে এবং অনুধাবনমূলক উত্তর পরে অথবা অনুধাবনমূলকের উত্তর আগে, জ্ঞানমূলকের উত্তর পরে লেখা যায়। তবে জ্ঞানমূলকের উত্তর আগে লিখে অনুধাবনের উত্তর পরে লেখাই ভালো।
৫। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর এক প্যারায়ও লেখা যায়, দুই প্যারায়ও লেখা যায়। তবে আমরা দুই প্যারায় লেখার চেষ্টা করব। তাতে উত্তরের ধারাবাহিকতা থাকে এবং পরীক্ষকের খাতা দেখতেও সুবিধা হয়। আর অনুধাবনমূলক প্রশ্নের শুরুতেকবি/সাহিত্যিক এবং সংশ্লিষ্ট কবিতা/গল্পের নামটি উল্লেখ করতে পারলে ভালো। যেমন—অনুধাবনের প্রশ্ন ছিল—‘লোলিত পাপের আমূল রসনা ক্রুর অগ্নিতে ঢাকা’—কথাটির তাৎপর্য কী?
৬। প্রয়োগমূলক প্রশ্নের মোট নম্বর-৩। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে এবং ১ নম্বর প্রয়োগে। কাজেই এ প্রশ্নের উত্তরে তিন প্যারা করাই উত্তম। যদিও এক প্যারায় সব তথ্য দিয়ে উত্তর লিখলেও হবে। তবে আমরা তিন প্যারায়ই করব। প্রয়োগ মানে আমরা জানি শিক্ষার্থী তার পাঠ্যবই থেকে যা জেনেছে এবং যা বুঝেছে তা নতুন ক্ষেত্রে অর্থাৎ উদ্দীপকে প্রয়োগ করবে। কাজেই উদ্দীপকটি যে ভাবের (Theme) আলোকে তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ উদ্দীপকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গল্প/কবিতার যে দিকটির সাদৃশ্য/বৈসাদৃশ্য থাকে, সেটাই জ্ঞান। ওই দিকটি একটি বাক্যে লিখতে পারলেই ১ নম্বর অর্থাৎ জ্ঞানের উত্তর হয়ে গেল। তারপর ওই দিকটি/প্রসঙ্গটি পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করাই হলো অনুধাবন। দ্বিতীয় প্যারায় আমরা অনুধাবন অংশের উত্তর লিখব। এবং সবশেষে ওই দিকটি উদ্দীপকে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা করাই প্রয়োগ। যেমন প্রশ্ন ছিল উদ্দীপকের আরজ আলীর সঙ্গে ‘অবাক সূর্যোদয়’ কবিতায় কাদের সাদৃশ্য রয়েছে?
৭। উচ্চতর দক্ষতা মানেই একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার। প্রশ্নেই সাধারণত একটা সিদ্ধান্ত দেওয়া থাকবে। যদি সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়, তাহলে সেটাকেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে, উদ্দীপকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করব যে সিদ্ধান্তটি সঠিক। আর যদি সিদ্ধান্তটি ভুল হয় তাহলে কেন ভুল, সেটাও প্রমাণ করতে হবে। অনেক সময় সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উদ্দীপকের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের যে অংশটুকুর মিল আছে তা বর্ণনা করে যে যে ক্ষেত্রে মিল নেই সেগুলোও বর্ণনা করতে হবে এবং সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে বক্তব্যটি/সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিচার-বিশ্লেষণ-সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার নামই উচ্চতর দক্ষতা। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি/প্রশ্নটি ভালোভাবে পড়ে পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে হবে। সিদ্ধান্ত বুঝতে ভুল হলে পুরো ৪ নম্বরে ০ পাবে। এ ক্ষেত্রে আমরা তিনটি-/চারটি প্যারা করার চেষ্টা করব। যেমন আমাদের প্রশ্ন ছিল, উদ্দীপকের মূল বক্তব্যই যেন ‘অবাক সূর্যোদয়’ কবিতার মূল বক্তব্য—মূল্যায়ন করো।
জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা জেএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রে ১০০ ও বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ১০০ নম্বর থাকবে। বাংলা প্রথম পত্রে ১০০ নম্বরের ৬০নম্বর বরাদ্দ করা আছে সৃজনশীল (রচনামূলক) অংশের জন্য আর বাকি ৪০ নম্বর বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য। বাংলা প্রথম পত্রের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যে দিকটির প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার তা হলো সময়। এখানে সময়ের তুলনায় লেখার পরিমাণ বেশি বলে সব প্রশ্নের উত্তর করতে শিক্ষার্থীদের হিমশিম খেতে হয়। তাই শুরু থেকেই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে নমুনা প্রশ্ন তৈরি করে সময় ধরে চর্চা করা যেতে পারে। সৃজনশীল প্রশ্নের সঠিক উত্তর করতে হলে মূল বই বা বোর্ডবইয়ের বিকল্প নেই। প্রতিটি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ—এগুলোর বারবার পড়ে আয়ত্ত করতে হবে। তবেই যেকোনো সৃজনশীল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে ৪০ নম্বরের যে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন রয়েছে, সেগুলো সমাধানেও সহায়ক হবে বলে আশা করছি। সৃজনশীল প্রশ্নের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের একটি প্রশ্ন প্রায়ই করতে দেখা যায় সেটি হলো, সৃজনশীল (রচনামূলক) প্রশ্নের কোন স্তরের প্রশ্নের উত্তরের পরিধি কতটুকু হবে। কিন্তু সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর কোনো পরিধিনির্ভর নয়, শুধু সঠিক তথ্য থাকলেই যথেষ্ট। জ্ঞানস্তরে শিক্ষার্থী সঠিক উত্তর লিখেছে কি না, অনুধাবন জ্ঞান ও অনুধাবন দুটি স্তরই উপস্থিত কি না এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লিখিত বাস্তব ঘটনার সঙ্গে শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের ঘটনার মিল বা তুলনা দেখাতে পেরেছে কি না—এসব উপস্থিত থাকাই যথেষ্ট; পরিধি কোনো ব্যাপার নয়। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নে নির্ধারিত স্তরের উত্তরের উপস্থিতি থাকাই যথেষ্ট।
বাংলা দ্বিতীয় পত্রের যে মান বণ্টন, অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি সম্পূর্ণ নতুন। এখানে মোট ১০০ নম্বরের ৫০ রচনামূলক এবং ৫০ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরের জন্য নিম্নমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ (বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত) বইটিই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যা করণীয় তা হলো, বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পাঠ্যসূচিভুক্ত প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বুঝে চর্চা করতে হবে। বহুনির্বাচনী প্রশ্নে পূর্ণ নম্বর পেতে হলে অবশ্যই মূল বই খুব বেশি পড়তে হবে।
রচনামূলক অংশে অনুবাদ ৫, সারাংশ/সারমর্ম ১০, চিঠি/দরখাস্ত ১০, ভাবসম্প্রসারণ ১০, রচনা ১৫ নম্বর থাকবে।
সঠিক অনুবাদের জন্য চর্চাই আসল কথা। যত বেশি চর্চা করবে, অনুবাদ ততই তাড়াতাড়ি ও সঠিক করা সম্ভব। সারাংশ/সারমর্মের বিষয়টি বারবার পড়ে তবেই এর মূলভাব লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখা দরকার, সারাংশ/সারমর্মের পরিধি যেন ব্যাপক বা বিস্তৃত হয়ে না পড়ে। ভাবসম্প্রসারণ লেখার সময় প্যারার শিরোনাম না লিখে প্যারা ভাগ করে লেখাই যথেষ্ট। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভাবসম্প্রসারণে মনীষীদের জীবনী থেকে উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। চিঠি/দরখাস্ত লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দরখাস্ত বা আবেদনপত্রকে বেছে নেয়। কিন্তু চিঠি বা আবেদনপত্র যা-ই লেখুক না কেন, যথাযথ নিয়ম মেনে লিখলে চিঠি বাদরখাস্ত যেকোনাটাতেই ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। ব্যক্তিগত চিঠি লেখার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে প্রতিটি অংশ ঠিক রেখে লিখলে ভালো নম্বর আসবে। চিঠি বা দরখাস্তের বেলায় সব ধরনের বাহুল্য অবশ্যই বর্জনীয়। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে রচনা একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে রচনার বিষয় নির্বাচনও খুব গুরুত্বসহকারে করতে হবে। তথ্যবহুল রচনায় বেশি নম্বর আসে। এ ক্ষেত্রে তথ্যগুলো ছক আকারে দেওয়া যেতে পারে। সাম্প্রতিক জাতীয় সমস্যাবলি বা জাতীয় বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। রচনার ক্ষেত্রে সব ধরনের বাহুল্যপরিহার করে সময় মাথায় রেখে রচনা লিখতে হবে।
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, যারা এবার জেএসসি পরীক্ষা দেবে, তারা নিশ্চয়ই প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছ। তবে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর কাছে গণিতকে অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় একটু কঠিন বলে মনে হয়। তাদের উদ্দেশে আমি বলব, অন্যান্য বিষয়ের মতো গণিতও সহজবোধ্য একটি বিষয়। গণিতকে বন্ধু ভেবে মনোনিবেশ সহকারে প্রতিদিন চর্চা করলেই এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা যায়। তোমরা যারা এবার জেএসসি পরীক্ষা দেবে, তারা নিচের টিপস অনুসরণ করলে ভালোফল পাবে।
১। পাটিগণিতের অঙ্কগুলো বারবার মন দিয়ে পড়তে হবে। প্রদত্ত সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে কী করতে হবে, তা স্থির করতে হবে এবং সে মতো সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে হবে। হালকাভাবে প্রশ্ন পড়ে কখনো সমস্যা সমাধানে অগ্রসর হবে না। সে ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল প্রাপ্তি নাও হতে পারে।
২। বীজগণিতের সূত্র প্রয়োগ করে মান নির্ণয় করণ এবং সরল করার ক্ষেত্রে সূত্রের প্রয়োগ বারবার করা আবশ্যক। মনে রাখবে, যত চর্চা করবে, ততই সূত্রগুলো মনে থাকবে এবং তোমার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
৩। বীজগণিতের প্রশ্নের অঙ্কগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করবে এবং লক্ষ করবে প্রদত্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তোমার গঠিত সমীকরণটি সঠিক হয়েছে কি না।
৪। বীজগণিত অঙ্কের ‘উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো’ অঙ্কটি অবশ্যই ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। কারণ উৎপাদকে বিশ্লেষণ শিখতে পারলেই তুমি ল.সা.গু. গ.সা.গু এবং এ সংক্রান্ত অঙ্কগুলো সমাধান করতে পারবে।
৫। লেখচিত্র অঙ্কন ও তা থেকে প্রদত্ত দুটি সরলরেখার সমীকরণের সমাধান অতি সহজেই করা যায়। বাড়িতে এ অধ্যয়টি একটু চেষ্টা করলেই নিজের দখলে আনতে পারবে।
৬। জ্যামিতির উপপাদ্যগুলোর প্রতিজ্ঞা (Theorem) মুখস্থ রাখবে। কারণ অনুশীলনীর সমস্যা সমাধানে সবসময় এর প্রয়োজন পড়বে।
৭। চিত্র সঠিকভাবে আঁকবে। বিকৃত চিত্র হলে কোনো নম্বর পাবে না।
৮। HB পেনসিল ব্যবহার করে কাটা কম্পাস ও স্কেলের সাহায্যে জ্যামিতির সম্পাদ্য অঙ্কন করবে। অবশ্যই অঙ্কনের চিহ্ন খাতায় থাকতে হবে।
৯। উপপাদ্য এমনভাবে প্রমাণ করবে, যাতে পরীক্ষককে বারবার পৃষ্ঠা উল্টিয়ে খাতা দেখতে না হয়।
১০। সব পরীক্ষার্থীকে বলব, সব কিছুই শিখবে ও জানবে। তা না হলে বোর্ডের নির্দেশানুযায়ী এমনভাবে প্রস্তুতি নেবে যাতে সব অনুশীলনী না করেও তুমি শতভাগ উত্তর করতে পারো।
পরীক্ষার ধরন ও পদ্ধতি: বাংলা প্রথম পত্র ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৬০ নম্বর সৃজনশীল অংশে এবং ৪০ নম্বর বহুনির্বাচনী অংশের জন্য বরাদ্দ। তোমার সাহিত্যকণিকা বইয়ে মোট ১৮টি গদ্য পাঠ্য আছে। এই গদ্যাংশ থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে ৫টি, উত্তর দিতে হবে ৩টির। আর কবিতা পাঠ্য আছে ১৪টি। কবিতাংশ থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে ৪টি এবং উত্তর দিতে হবে ৩টির। এই ৬টি প্রশ্নের উত্তর করার জন্য সময় পাবে দুই ঘণ্টা ১০ মিনিট। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য তুমি সর্বোচ্চ ১৯ থেকে ২০ মিনিট সময় পাবে। এর বেশি সময় নিলেই সব কটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। আর কোনোক্রমেই গদ্য থেকে ৪টি, কবিতা থেকে ২টি অথবা কবিতা থেকে ৪টি, গদ্য থেকে ২টি—এ রকমভাবে উত্তর দেওয়া যাবে না। উভয় অংশ থেকে তিনটি করে মোট ছয়টি প্রশ্নের উত্তরই দিতে হবে।
এবার বহুনির্বাচনী প্রসঙ্গ। তোমার পাঠ্যসূচির ৩২টি গদ্য-কবিতার সব কটি থেকেই কমপক্ষে ১টি করে মোট ৪০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ) থাকবে। এই ৪০টি MCQ প্রশ্নের মধ্যে আবার চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তর-জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ এবং উচ্চতর-দক্ষতার প্রশ্নও থাকবে। সব প্রশ্নেরই উত্তর করতে হবে। সময় পাবে ৪০ মিনিট। তবে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য কোনো বৃত্ত ভরাট করতে হবে না। তোমার সৃজনশীল পরীক্ষার খাতার সঙ্গেই বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরপত্র থাকবে। MCQ প্রশ্ন পাওয়ার পর সেই উত্তরপত্রের বৃত্তে টিকচিহ্ন দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, উত্তরপত্রে কোনো কাটাকাটি চলবে না। অর্থাৎ একটা উত্তর একবার দিয়ে আবার কেটে আরেকটা দেওয়া যাবে না।
এবার বাংলা দ্বিতীয়পত্র প্রসঙ্গ। ১০০ নম্বরের দ্বিতীয় পত্রে ৫০ নম্বর রচনামূলক অংশের জন্য এবং বাকি ৫০ নম্বর বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ। রচনামূলক অংশের উত্তরের জন্য সময় পাবে দুই ঘণ্টা। এখানে যেভাবে উত্তর দিতে হবে তা হলো—২টি ইংরেজি অনুচ্ছেদ থেকে একটির বাংলায় অনুবাদ, নম্বর—৫। ২টি চিঠিপত্র বা আবেদনপত্র থেকে একটির উত্তর, নম্বর—১০। ২টি সারাংশ বা সারমর্ম থেকে একটির উত্তর, নম্বর—১০। ২টি ভাবসম্প্রসারণ থেকে ১টির উত্তর, নম্বর—১০ এবং ৫টি রচনা থেকে ১টির উত্তর, নম্বর—১৫। আর বহুনির্বাচনী অংশে ৫০টি MCQ এর জন্য সময় পাবে ৫০ মিনিট। আর এই ৫০টি প্রশ্নের মধ্যে ৫টি প্রশ্ন অনুবাদ ও ৫টি প্রশ্ন চিঠিপত্র অংশ থেকে থাকবে। বিরচন অংশ (অষ্টম শ্রেণীর রচনাসম্ভার বইয়ের সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, পারিভাষিক শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ ইত্যাদি) থেকে থাকবে ১০টি প্রশ্ন। আর বাকি ৩০টি MCQ থাকবে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীর বোর্ডের ব্যাকরণ বইয়ের ভাষা ও ব্যাকরণ, ধ্বনি ও বর্ণ, সন্ধি, শব্দ পরিচয়, পদ, বচন, লিঙ্গ, পুরুষ, কারক ও বিভক্তি, অনুসর্গ, উপসর্গ, ক্রিয়ামূল, কাল, সমাস, বাক্য ও বাক্যের প্রকারভেদ, স্বরভঙ্গি ও বিরাম চিহ্ন অধ্যায় থেকে। এখানেও বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরগুলোতে টিকচিহ্ন দিতে হবে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ভালো করার জন্য বোর্ডের ব্যাকরণ ও রচনাসম্ভার বইটি ভালোভাবে পড়তে হবে।
# সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নোত্তরের জন্য নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে।
১. সৃজনশীল পদ্ধতিতে যেকোনো গল্প-কবিতার ভাবের আলোকে একটি মৌলিক উদ্দীপক থাকে এবং যে গল্প বা কবিতার আলোকে উদ্দীপক তৈরি করা হয়েছে, সেই গল্প বা কবিতা থেকেই জ্ঞান এবং অনুধাবনমূলক প্রশ্ন করা হবে। কোনোক্রমেই উদ্দীপক থেকে জ্ঞান এবং অনুুধাবনের প্রশ্ন করা যাবে না। সৃজনশীল পদ্ধতিতে যেহেতু চারটি অংশ (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা) মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশ্ন, তাই প্রতিটি অংশের উত্তর লেখার সময় প্রতিবার ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর (ক), ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর (খ), ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর (গ) এবং ১নম্বর প্রশ্নের উত্তর (ঘ)—এভাবে লিখতে হবে। আর এ লেখাগুলো ভিন্ন রঙের (সবুজ/নীল/মেরুন/বাদামি ইত্যাদি) কালি দিয়ে লিখলে দেখতে ভালো লাগবে।
২. যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করলে তার চারটি অংশের উত্তরই ধারাবাহিকভাবে লিখতে হবে। একটি প্রশ্নের জ্ঞানের উত্তর আরেক প্রশ্নের প্রয়োগের উত্তর—এভাবে করা যাবে না। কোনো উত্তর যদি কেউ না পারে, সে ক্ষেত্রে সেটা বাদ দিয়ে এর পরের অংশের উত্তর কতে হবে। জায়গা ফাঁকা রাখার দরকার নেই।
৩. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর একটি শব্দে, একাধিক শব্দে বা একটি বাক্যে দেওয়া যাবে। তবে আমরা জ্ঞানমূলকের উত্তর একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্যে দেওয়ার চেষ্টা করব। যেমন—‘অবাক সূর্যোদয়’ কবিতার ভাবের আলোকে নিচে একটি উদ্দীপক এবং সংশ্লিষ্ট চারটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। এর একটি নমুনা উত্তরও দেওয়া হলো। এ থেকে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের রীতিনীতি, উত্তরের পরিসীমা সম্পর্কে স্পষ্ট একটি ধারণা পাওয়া যাবে।
৪। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের নম্বর-২। কারণ এর মধ্যে একটি নম্বর জ্ঞানের জন্য, আরেকটি নম্বর অনুধাবনের জন্য। তুমি ইচ্ছে করলে জ্ঞান অংশের উত্তর আগে এবং অনুধাবনমূলক উত্তর পরে অথবা অনুধাবনমূলকের উত্তর আগে, জ্ঞানমূলকের উত্তর পরে লেখা যায়। তবে জ্ঞানমূলকের উত্তর আগে লিখে অনুধাবনের উত্তর পরে লেখাই ভালো।
৫। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর এক প্যারায়ও লেখা যায়, দুই প্যারায়ও লেখা যায়। তবে আমরা দুই প্যারায় লেখার চেষ্টা করব। তাতে উত্তরের ধারাবাহিকতা থাকে এবং পরীক্ষকের খাতা দেখতেও সুবিধা হয়। আর অনুধাবনমূলক প্রশ্নের শুরুতেকবি/সাহিত্যিক এবং সংশ্লিষ্ট কবিতা/গল্পের নামটি উল্লেখ করতে পারলে ভালো। যেমন—অনুধাবনের প্রশ্ন ছিল—‘লোলিত পাপের আমূল রসনা ক্রুর অগ্নিতে ঢাকা’—কথাটির তাৎপর্য কী?
৬। প্রয়োগমূলক প্রশ্নের মোট নম্বর-৩। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে এবং ১ নম্বর প্রয়োগে। কাজেই এ প্রশ্নের উত্তরে তিন প্যারা করাই উত্তম। যদিও এক প্যারায় সব তথ্য দিয়ে উত্তর লিখলেও হবে। তবে আমরা তিন প্যারায়ই করব। প্রয়োগ মানে আমরা জানি শিক্ষার্থী তার পাঠ্যবই থেকে যা জেনেছে এবং যা বুঝেছে তা নতুন ক্ষেত্রে অর্থাৎ উদ্দীপকে প্রয়োগ করবে। কাজেই উদ্দীপকটি যে ভাবের (Theme) আলোকে তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ উদ্দীপকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গল্প/কবিতার যে দিকটির সাদৃশ্য/বৈসাদৃশ্য থাকে, সেটাই জ্ঞান। ওই দিকটি একটি বাক্যে লিখতে পারলেই ১ নম্বর অর্থাৎ জ্ঞানের উত্তর হয়ে গেল। তারপর ওই দিকটি/প্রসঙ্গটি পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করাই হলো অনুধাবন। দ্বিতীয় প্যারায় আমরা অনুধাবন অংশের উত্তর লিখব। এবং সবশেষে ওই দিকটি উদ্দীপকে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা করাই প্রয়োগ। যেমন প্রশ্ন ছিল উদ্দীপকের আরজ আলীর সঙ্গে ‘অবাক সূর্যোদয়’ কবিতায় কাদের সাদৃশ্য রয়েছে?
৭। উচ্চতর দক্ষতা মানেই একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার। প্রশ্নেই সাধারণত একটা সিদ্ধান্ত দেওয়া থাকবে। যদি সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়, তাহলে সেটাকেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে, উদ্দীপকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করব যে সিদ্ধান্তটি সঠিক। আর যদি সিদ্ধান্তটি ভুল হয় তাহলে কেন ভুল, সেটাও প্রমাণ করতে হবে। অনেক সময় সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উদ্দীপকের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের যে অংশটুকুর মিল আছে তা বর্ণনা করে যে যে ক্ষেত্রে মিল নেই সেগুলোও বর্ণনা করতে হবে এবং সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে বক্তব্যটি/সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিচার-বিশ্লেষণ-সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার নামই উচ্চতর দক্ষতা। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি/প্রশ্নটি ভালোভাবে পড়ে পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে হবে। সিদ্ধান্ত বুঝতে ভুল হলে পুরো ৪ নম্বরে ০ পাবে। এ ক্ষেত্রে আমরা তিনটি-/চারটি প্যারা করার চেষ্টা করব। যেমন আমাদের প্রশ্ন ছিল, উদ্দীপকের মূল বক্তব্যই যেন ‘অবাক সূর্যোদয়’ কবিতার মূল বক্তব্য—মূল্যায়ন করো।
জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা জেএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রে ১০০ ও বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ১০০ নম্বর থাকবে। বাংলা প্রথম পত্রে ১০০ নম্বরের ৬০নম্বর বরাদ্দ করা আছে সৃজনশীল (রচনামূলক) অংশের জন্য আর বাকি ৪০ নম্বর বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য। বাংলা প্রথম পত্রের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যে দিকটির প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার তা হলো সময়। এখানে সময়ের তুলনায় লেখার পরিমাণ বেশি বলে সব প্রশ্নের উত্তর করতে শিক্ষার্থীদের হিমশিম খেতে হয়। তাই শুরু থেকেই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে নমুনা প্রশ্ন তৈরি করে সময় ধরে চর্চা করা যেতে পারে। সৃজনশীল প্রশ্নের সঠিক উত্তর করতে হলে মূল বই বা বোর্ডবইয়ের বিকল্প নেই। প্রতিটি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ—এগুলোর বারবার পড়ে আয়ত্ত করতে হবে। তবেই যেকোনো সৃজনশীল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে ৪০ নম্বরের যে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন রয়েছে, সেগুলো সমাধানেও সহায়ক হবে বলে আশা করছি। সৃজনশীল প্রশ্নের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের একটি প্রশ্ন প্রায়ই করতে দেখা যায় সেটি হলো, সৃজনশীল (রচনামূলক) প্রশ্নের কোন স্তরের প্রশ্নের উত্তরের পরিধি কতটুকু হবে। কিন্তু সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর কোনো পরিধিনির্ভর নয়, শুধু সঠিক তথ্য থাকলেই যথেষ্ট। জ্ঞানস্তরে শিক্ষার্থী সঠিক উত্তর লিখেছে কি না, অনুধাবন জ্ঞান ও অনুধাবন দুটি স্তরই উপস্থিত কি না এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লিখিত বাস্তব ঘটনার সঙ্গে শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের ঘটনার মিল বা তুলনা দেখাতে পেরেছে কি না—এসব উপস্থিত থাকাই যথেষ্ট; পরিধি কোনো ব্যাপার নয়। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নে নির্ধারিত স্তরের উত্তরের উপস্থিতি থাকাই যথেষ্ট।
বাংলা দ্বিতীয় পত্রের যে মান বণ্টন, অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি সম্পূর্ণ নতুন। এখানে মোট ১০০ নম্বরের ৫০ রচনামূলক এবং ৫০ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরের জন্য নিম্নমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ (বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত) বইটিই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যা করণীয় তা হলো, বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পাঠ্যসূচিভুক্ত প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বুঝে চর্চা করতে হবে। বহুনির্বাচনী প্রশ্নে পূর্ণ নম্বর পেতে হলে অবশ্যই মূল বই খুব বেশি পড়তে হবে।
রচনামূলক অংশে অনুবাদ ৫, সারাংশ/সারমর্ম ১০, চিঠি/দরখাস্ত ১০, ভাবসম্প্রসারণ ১০, রচনা ১৫ নম্বর থাকবে।
সঠিক অনুবাদের জন্য চর্চাই আসল কথা। যত বেশি চর্চা করবে, অনুবাদ ততই তাড়াতাড়ি ও সঠিক করা সম্ভব। সারাংশ/সারমর্মের বিষয়টি বারবার পড়ে তবেই এর মূলভাব লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখা দরকার, সারাংশ/সারমর্মের পরিধি যেন ব্যাপক বা বিস্তৃত হয়ে না পড়ে। ভাবসম্প্রসারণ লেখার সময় প্যারার শিরোনাম না লিখে প্যারা ভাগ করে লেখাই যথেষ্ট। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভাবসম্প্রসারণে মনীষীদের জীবনী থেকে উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। চিঠি/দরখাস্ত লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দরখাস্ত বা আবেদনপত্রকে বেছে নেয়। কিন্তু চিঠি বা আবেদনপত্র যা-ই লেখুক না কেন, যথাযথ নিয়ম মেনে লিখলে চিঠি বাদরখাস্ত যেকোনাটাতেই ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। ব্যক্তিগত চিঠি লেখার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে প্রতিটি অংশ ঠিক রেখে লিখলে ভালো নম্বর আসবে। চিঠি বা দরখাস্তের বেলায় সব ধরনের বাহুল্য অবশ্যই বর্জনীয়। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে রচনা একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে রচনার বিষয় নির্বাচনও খুব গুরুত্বসহকারে করতে হবে। তথ্যবহুল রচনায় বেশি নম্বর আসে। এ ক্ষেত্রে তথ্যগুলো ছক আকারে দেওয়া যেতে পারে। সাম্প্রতিক জাতীয় সমস্যাবলি বা জাতীয় বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। রচনার ক্ষেত্রে সব ধরনের বাহুল্যপরিহার করে সময় মাথায় রেখে রচনা লিখতে হবে।
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, যারা এবার জেএসসি পরীক্ষা দেবে, তারা নিশ্চয়ই প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছ। তবে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর কাছে গণিতকে অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় একটু কঠিন বলে মনে হয়। তাদের উদ্দেশে আমি বলব, অন্যান্য বিষয়ের মতো গণিতও সহজবোধ্য একটি বিষয়। গণিতকে বন্ধু ভেবে মনোনিবেশ সহকারে প্রতিদিন চর্চা করলেই এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা যায়। তোমরা যারা এবার জেএসসি পরীক্ষা দেবে, তারা নিচের টিপস অনুসরণ করলে ভালোফল পাবে।
১। পাটিগণিতের অঙ্কগুলো বারবার মন দিয়ে পড়তে হবে। প্রদত্ত সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে কী করতে হবে, তা স্থির করতে হবে এবং সে মতো সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে হবে। হালকাভাবে প্রশ্ন পড়ে কখনো সমস্যা সমাধানে অগ্রসর হবে না। সে ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল প্রাপ্তি নাও হতে পারে।
২। বীজগণিতের সূত্র প্রয়োগ করে মান নির্ণয় করণ এবং সরল করার ক্ষেত্রে সূত্রের প্রয়োগ বারবার করা আবশ্যক। মনে রাখবে, যত চর্চা করবে, ততই সূত্রগুলো মনে থাকবে এবং তোমার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
৩। বীজগণিতের প্রশ্নের অঙ্কগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করবে এবং লক্ষ করবে প্রদত্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তোমার গঠিত সমীকরণটি সঠিক হয়েছে কি না।
৪। বীজগণিত অঙ্কের ‘উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো’ অঙ্কটি অবশ্যই ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। কারণ উৎপাদকে বিশ্লেষণ শিখতে পারলেই তুমি ল.সা.গু. গ.সা.গু এবং এ সংক্রান্ত অঙ্কগুলো সমাধান করতে পারবে।
৫। লেখচিত্র অঙ্কন ও তা থেকে প্রদত্ত দুটি সরলরেখার সমীকরণের সমাধান অতি সহজেই করা যায়। বাড়িতে এ অধ্যয়টি একটু চেষ্টা করলেই নিজের দখলে আনতে পারবে।
৬। জ্যামিতির উপপাদ্যগুলোর প্রতিজ্ঞা (Theorem) মুখস্থ রাখবে। কারণ অনুশীলনীর সমস্যা সমাধানে সবসময় এর প্রয়োজন পড়বে।
৭। চিত্র সঠিকভাবে আঁকবে। বিকৃত চিত্র হলে কোনো নম্বর পাবে না।
৮। HB পেনসিল ব্যবহার করে কাটা কম্পাস ও স্কেলের সাহায্যে জ্যামিতির সম্পাদ্য অঙ্কন করবে। অবশ্যই অঙ্কনের চিহ্ন খাতায় থাকতে হবে।
৯। উপপাদ্য এমনভাবে প্রমাণ করবে, যাতে পরীক্ষককে বারবার পৃষ্ঠা উল্টিয়ে খাতা দেখতে না হয়।
১০। সব পরীক্ষার্থীকে বলব, সব কিছুই শিখবে ও জানবে। তা না হলে বোর্ডের নির্দেশানুযায়ী এমনভাবে প্রস্তুতি নেবে যাতে সব অনুশীলনী না করেও তুমি শতভাগ উত্তর করতে পারো।